সিজে নিউজ ডেস্কঃ
ঢাকার সাভারে গোলাম কিবরিয়া(৪৩) নামে এক শিক্ষককে হত্যার পর চিরকুট লিখে ফেলে রাখার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ইমনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সোমবার রাতে যশোর, ঝিনাইদহ ও রংপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডের পর লুটকৃত ৫ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। র্যাব জানিয়েছে, টাকা লুট করতেই গোলাম কিবরিয়াকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব এ তথ্য জানায় কমান্ডার মঈন খান।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত রোববার বিকেল তিনটার দিকে সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কক্ষ থেকে হাত-পা বাঁধা ও গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় গোলাম কিবরিয়া (৪৩) নামে সাবেক এক স্কুল শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় মরদেহের পাশ থেকে ‘এই ব্যক্তি সমকামী করে পুলিশ ভাই, আমরা তাই মেরে ফেলেছি, ভাই ও অবৈধ কাজ করে……..আমরা ইসলামের সৈনিক’ লেখা একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই সাভার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। র্যাব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে র্যাব-৪, ৬ ও ১৩-র একটি আভিযানিক দল যশোর, ঝিনাইদহ ও রংপুর এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে মূল পরিকল্পনাকারী মো. ইমন খান (২৩) ও মো. সাগর (২২) এবং তাদের সহযোগী মো. ছাদেক গাজীকে (২২) গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোলাম কিবরিয়া সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। সাভার রেডিও কলোনী মডেল স্কুলের সাবেক শিক্ষক। কয়েক বছর ধরে নিজ বাড়িতে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। পাশাপাশি জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইমনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গ্রেপ্তার সাগর একজন অটোরিকশাচালক। তার রিক্সায় যাতায়াতের সুবাদে দুই বছর আগে ওই শিক্ষকের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তার মাধ্যমে ইমনও পরিচিত হন। তারা গোলাম কিবরিয়ার বাসায় যাতায়াত করতেন। এর সুবাদে আলমারিতে রাখা জমি ক্রয়-বিক্রয়ের বিপুল পরিমাণ টাকা তাদের নজরে আসে। এই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা।
র্যাব জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাত পৌনে ১১টায় ইমন ও ছাদেক গোলাম কিবরিয়ার বাসায় যান। রাতের হালকা নাস্তা শেষে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ছাদেক তার গলা চেপে ধরে এবং ইমন মুখ চেপে ধরে। লুঙ্গী দিয়ে হাত-পা বেঁধে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ছাদেক চিরকুট লিখে মরদেহের পাশে রেখে দেয়। হত্যার সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর অটোরিকশা নিয়ে ভিকটিমের বাসার আশেপাশে অবস্থান করছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পরে তারা বিছানার নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও চারটি মোবাইল ফোন লুট করেন।
গ্রেপ্তারদের সাভার মডেল থানায় হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান র্যাব।