সিজে নিউজ ডেস্কঃ
সাভারের আশুলিয়ায় এনজিও’র দায়ের করা এনআই অ্যাক্টের মামলায় দুই শিশুসহ মাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই দুই শিশুসহ তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে
রাত থানায় এক নারী দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে একটি কক্ষে আটক দেখে জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, আমি জানি না, কেন তারা আমাকে গ্রেফতার করেছে। শুধু শুনেছি আমার স্বামী নাকি কিস্তি দিতে পারে নাই। তাই তারা আমার নামে মামলা দিয়েছে। অথচ আমি কোন এনজিও থেকে টাকাই তুলিনি। তারা স্বামীকে কিছু না বলে আমাকে ধরে এনেছেন।
এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছর খানিক আগে দি ঢাকা মার্কেটাইল ব্যাংক কো অপারেটিভ লি: নামের একটি এনজিও’র পল্লীবিদ্যুৎ শাখা থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন স্বামী মনির হোসেন। ঋণের ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও প্রায় এক লক্ষ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন। পরে এনজিও কতৃপক্ষ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ঋণ গ্রহীতা মনির হোসেনের স্ত্রী হানিয়া বেগমকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তাকে ও আড়াই বছরের রায়হান আর ১৪ মাস বয়সের মাশরাফ সন্তানকে থানায় নিয়ে আসেন।
ঋণ গ্রহিতা গ্রেফতারকৃত নারীর স্বামী মনির হোসেন বলেন, ঋণ নিয়েছি আমি, আমাকে গ্রেফতার না করে, তারা আমার স্ত্রী সন্তানকে থানায় নিয়ে আসছে। ছোট্ট ব্যবসা করতাম লোকসানের মুখে পড়ায় কিস্তি দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছি।
গ্রেফতার করা অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া পুলিশের উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, হানিয়া বেগমের নামে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে। সঙ্গে তার দুই শিশু সন্তানও রয়েছে, তারা বুকের দুধ খায় তাই রেখে আসাতে পারিনি।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় বেশ সমালোচনার জম্ম দেয়। খোদ পুলিশেও সৃষ্টি হয়েছে সমালোচনা।
পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক বলেন, ছোট ছোট বাচ্চা দুটিকে নিয়ে আসা ঠিক হয়নি। সারারাত শীতে কষ্ট করেছে, কান্নাকাটি করেছে। হয় তাকে আদালতে জামিন হতে বলে চলে আসা, না হয় বাচ্চা দুটিকে কোন আত্মির কাছে রেখে আসা উচিত ছিল। এখন যে কেউ বাচ্চা দুটিকে দেখলে, পুলিশের বিরুদ্ধে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হবে।
স্থানীয় একজন বলেন, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। সমাজে দাপটের সঙ্গে একাধিক মামলার আসামিরা ঘুরাফেরা করছেন। কেউ হত্যা মামলার আসামি হয়েও রাতে বাসায় ঘুমাচ্ছেন, অথচ সামান্য কয়টা টাকার জন্য দুই দুগ্ধ শিশুকে থানায় নিয়ে আসা কতটুকু যৌক্তিক। টাকা দেওয়ার এবিলিটি থাকলে কেউ এনজিও থেকে লোন নেয় না, কিস্তি পরিশোধ করতে তাকে আরো কিছু সময় দেওয়া উচিত ছিল।
বিষয়টি নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সুশাসনের জন্য নাগরিকের ঢাকা বিভাগের সমন্বয়কারী জিল্লুর রহমান বলেন, এই শীতে বাচ্চা দুটিকে থানায় রাখাটি অমানবিক। পুলিশ ইচ্ছে করলে বাচ্চা দুটিকে আরো ভালো সুরক্ষা দিতে পারতো। কারণ ওসির অনেক দায়িত্ব ছিল। ওই নারীতো আর হত্যা কিংবা বড় কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত না।
বিষয়টি শুনে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক রাতেই বলেন, এটা দুঃখজনক এখনই দেখছি। তবে রাত পার হলেও বাচ্চা দুইটির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাকে।